শততম টেস্ট জয়, উৎসবে মেতে উঠেছে গোটা বাংলাদেশ

বাংলাদেশের স্বাধীনতার মাস মার্চে বিজয়ের স্বাদ পেল বাংলাদেশ। এ বিজয় ক্রিকেটের, এ বিজয় টেস্টের শততম টেস্টের মাইলফলকে অনন্য সৌরভের ছোঁয়া। ঐতিহাসিক ম্যাচ। আর স্বাভাবিকভাবেই শ্রীলঙ্কার মাটিতে শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে জয়ের উল্লাসটা অন্য সব জয়ের চেয়ে হাজার গুণে বেশি। এ জয়ে তাই ষোল কোটি বাঙ্গালির প্রাণে আজ উৎসবের আমেজ। ঢাকা-সহ সারা বাংলাদেশ এখন আনন্দে মেতে উঠেছে- এ যেন অন্য বাংলাদেশ। সবাই উদ্বেলিত একই আনন্দ উত্সবে।

শততম টেস্ট জয়ে বাংলাদেশ জুড়েই চলছে জয়ের উল্লাস। সে উল্লাস ঢাকাতে একটু বেশিই। রাজধানী জুড়ে বিজয়ের মিছিল আর স্লোগান। বাংলাদেশ সময় বিকেল সোয়া চারটে নাগাদ জয় নিশ্চিত হতেই ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) টিএসসিতে বিজয় উল্লাসে মেতে ওঠেন শিক্ষার্থীরা। কলম্বোর পি সারা ওভালে শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে দ্বিতীয় ও শেষ টেস্টে জয়ের আনন্দে ঢাবির বিভিন্ন হল থেকে শিক্ষার্থীরা মিছিল নিয়ে টিএসসিতে আসে। এতে যোগ দেয় পার্শ্ববর্তী বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীরা। এ সময় টাইগারদের প্রশংসা সম্বলিত স্লোগানে স্লোগানে মুখরিত হয়ে উঠে পুরো এলাকা।

নগরীর শিশু-কিশোর থেকে শুরু করে বৃদ্ধ-বৃদ্ধা, সব শ্রেণির মানুষ টাইগারদের এই ঐতিহাসিক বিজয়ে আনন্দ উল্লাসে মাতোয়ারা হয়ে ওঠেন।

দ্বিতীয় টেস্টের শেষ দিনে দ্বিতীয় ইনিংসে সবকটি উইকেট হারিয়ে শ্রীলঙ্কা তোলে ৩১৯ রান। প্রথম ইনিংসে বাংলাদেশের করা ৪৬৭ রানের উপর ভর করে টাইগারদের সামনে জয়ের জন্য টার্গেট দাড়ায় ১৯১ রানের।

জয়ের স্বপ্ন নিয়ে ব্যাট হাতে মাঠে নামে তামিম ইকবাল ও সৌম্য সরকার। সভাবসুলভ ব্যাট করতে থাকেন তামিম। দলীয় অষ্টম ওভারে রঙ্গনা হেরাথের শেষ দুই বলে সৌম্য সরকার ও ইমরুল কায়েস ফিরে যান। বিদায়ের আগে সৌম্য করেন ১০ রান। উপল থারাঙ্গার হাতে ক্যাচে তুলে দেন। পরের বলেই শূন্য রানে গুনারত্নেকে ক্যাচ দিয়ে ফেরেন ইমরুল। এরপর ক্রিজে নামেন সাব্বির রহমান। নিজের ইনিংসটাকে বড় করতে পারেননি। ব্যাট চালিয়ে ৭৬ বলে ৪১ রান করে দিলরুয়ান পেরেরার বলে এলবিডব্লু হয়ে যান।

টেস্ট খেলতে নেমে ওয়ানডে ভঙ্গিতে খেলে নিজের ২২তম টেস্ট-ফিফটি করেন তামিম ইকবাল নিলেন। নিজের নামের পাশে রান যখন ১২৫ বলে ৮২ তখন দিলরুয়ান পেরেরা বল তুলে মারতে গিয়ে ব্যাটের কানায় লেগে লং অনে দিনেশ চান্ডিমালের হাতে ক্যাচবন্দি হন। সাব্বিরের সঙ্গে তাঁর জুটিটা ১০৯ রানের।

এরপর পেরেরার তৃতীয় শিকারে পরিণত হয়ে মাত্র ১৫ রান ফিরে যান প্রথম ইনিংসের সেঞ্চুরিয়ান সাকিব আল হাসান। মাত্র ১৩ রান করে ফিরে যান মোছাদ্দেক। জয়ের বন্দরে পা রেখে মুশফিক ২২ রানে আর মিরাজ ২ রানে অপরাজিত থাকেন।

এর আগে শেষ দিনে নিজেদের দ্বিতীয় ইনিংসে সবকটি উইকেট হারিয়ে শ্রীলঙ্কা করে ৩১৯ রান। ব্যাট করতে নেমে বাংলাদেশ বোলারদের চাপের মুখে ফেলে দেয় দিলরুয়ান পেরেরা ও সুরাঙ্গা লাকমাল। জুটি গড়েন ৮০ রানের। দ্বিতীয় ইনিংসে বাংলাদেশকে বেশ ভুগিয়েছেন দিলরুয়ান পেরেরা। ১৭৪ বলে রান করেছেন মাত্র ৫০। অবশেষে রান আউটের ফাঁদে পড়েছেন তিনি। মেহেদি হাসান মিরাজের বলে রান নেওয়ার সময় আউট হন তিনি। এরপর সাকিব আল হাসানের বলে মোসাদ্দেককে ক্যাচ দিয়ে ৪২ রানে ফেরেন লাকমাল।

সিরিজের দ্বিতীয় টেস্টের চতুর্থ দিনটি বাংলাদেশের পক্ষেই ছিল। লঙ্কানরা নিজেদের দ্বিতীয় ইনিংসে ২১৪ রান তুলতে আট উইকেট হারায়। দিন শেষে মোট ২৬৮ রান করে। যেখানে লিড পায় ১৩৯ রানের। ওপেনার দিমুথ করুনারত্ন করেন ১২৬ রান। দিলরুয়ান পেরেরা (২৬) ও সুরাঙ্গা লাকমাল (১৬) অপরাজিত থেকে মাঠ ছাড়েন।

বাংলাদেশি বোলারদের মধ্যে মোস্তাফিজুর রহমান ও সাকিব আল হাসান তিনটি করে উইকেট তুলে নিয়ে লঙ্কানদের দ্বিতীয় ইনিংসে ধস নামান। মেহেদি হাসান মিরাজ ও তাইজুল ইসলাম একটি করে উইকেট পান।

এর আগে স্বাগতিক শ্রীলঙ্কা নিজেদের প্রথম ইনিংসে দিনেশ চান্দিমালের সেঞ্চুরিতে ৩৩৮ রান করতে সমর্থ হয়। জবাবে টাইগাররা দাপট দেখিয়ে ম্যাচে আধিপত্য বিস্তার করে। সাকিব আল হাসানের অসাধারণ সেঞ্চুরির সুবাদে ৪৬৭ রান করে হাতুরুসিংহের শিষ্যরা। ম্যাচে পায় ১২৯ রানের লিড।

এর আগে প্রথম ইনিংসে দিনেশ চান্দিমালের সেঞ্চুরিতে স্বাগতিক শ্রীলঙ্কা করে ৩৩৮ রান। জবাবে সাকিব আল হাসানের সেঞ্চুরির সুবাদে ৪৬৭ রান করে টাইগাররা।

উল্লেখ্য, টেস্টে ছুড়ে দেওয়া রান তাড়া করে বাংলাদেশ জিতেছে মাত্র দুবার। ২০০৯ সালের জুলাইয়ে গ্রেনাডায় ২১৫ রানের লক্ষ্য নিয়ে খেলতে নামা বাংলাদেশ ওয়েস্ট ইন্ডিজকে হারিয়েছিল ৪ উইকেটে। এরপর ২০১৪ সালের অক্টোবরে মিরপুর টেস্টে জিম্বাবুয়ের দেওয়া ১০১ রানের টার্গেটে জিতেছিল ৩ উইকেটে। -আনন্দবাজার পত্রিকা

Print Friendly, PDF & Email

     এ ক্যাটাগরীর আরো খবর